বিবরণমূলক লেখা

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা - বুঝে পড়ি লিখতে শিখি | | NCTB BOOK
44
44

জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক অভিজ্ঞতা থাকে, যা লিখে রাখা যায়। লিখে রাখলে কখনো তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আমার দেখা নয়াচীন' বই থেকে নেওয়া হয়েছে। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে চীনের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু চীন সফরে গিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি 'আমার দেখা নয়াচীন' বইটি লেখেন। এটি ২০২০ সালে ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির পিতা।

শেখ মুজিবুর রহমান

 

আমরা মিউজিয়ামে পৌঁছালাম। অনেক নিদর্শন বস্তু দেখলাম। উল্লেখযোগ্য বেশি কিছু দেখেছিলাম বলে মনে হয় না। তবে অনেক পুরানো কালের স্মৃতি দেখা গেল।

পরে আমরা লাইব্রেরি দেখতে যাই। শুনলাম সাংহাই শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পাবলিক লাইব্রেরি। খুবই বড়ো লাইব্রেরি সন্দেহ নেই, ব্যবস্থাও খুব ভালো। ব্রিডিং রুমগুলো ভাগ ভাগ করা রয়েছে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্যও একটা রুম আছে। সেখানে দেখলাম ছোটোদের পড়বার উপযুক্ত বইও আছে বহু, ইংরেজি বইও দেখলাম।

লাইব্রেরির সাথে ছোটো একটা মাঠ আছে, সেখানে বসবার বন্দোবস্ত রয়েছে। মাঠে বসে পড়াশোনা করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। আমার মনে হলো কলকাতার ইমপেরিয়াল লাইব্রেরির মতোই হবে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, লাইব্রেরিটা বহু পুরানো।

সেখান থেকে আমরা অ্যাকজিবিশন দেখতে যাই। আমাদের জন্য বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। নতুন চীন সরকার কী কী জিনিসপত্র তৈরি করেছেন তা দেখানো হলো। কত প্রকার ইনস্ট্রুমেন্ট করেছে, তাও দেখাল। আমরা ফিরে এলাম হোটেলে।

এক ঘণ্টা পরে আবার বেরিয়ে পড়লাম সাংহাই শহরের পাশে যে নদী বয়ে গেছে, তা দেখবার জন্য। আমাদের দেশের মতোই নৌকা, লঞ্চ চলছে এদিক ওদিক। নৌকা বাদাম দিয়ে চলে।

 পরে ছেলেদের খেলার মাঠে যাই, দেখি হাজার তিনেক ছেলেমেয়ে খেলা করছে। শিক্ষকরাও তাদের সাথে আছেন। আমাদের যাওয়ার সাথে সাথে কী একটা শব্দ করল, আর সকল ছেলেমেয়ে লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল। এবং আর একটা শব্দ হওয়ার পরে আমাদের সালাম দিলো, আমরা সালাম গ্রহণ করলাম। তারা স্লোগান আরম্ভ করল। আমরা বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

দোভাষীকে বললাম, ‘চলুন যেখানে সবচেয়ে বড়ো বাজার, সেখানে নিয়ে চলুন।' সেখানে পৌঁছেই একটা সাইকেলের দোকানে ঢুকলাম। সেখানে চীনের তৈরি সাইকেল ছাড়াও চেকশ্লোভাকিয়ার তৈরি তিন চারটা সাইকেল দেখলাম। তাতে দাম লেখা ছিল। চীনের তৈরি সাইকেল থেকে তার দাম কিছু কম। আমি বললাম, বিদেশি মাল তা হলে কিছু আছে?” দোকানদার উত্তর দিলো, আমাদের মালও তারা নেয়।' আমি বললাম, “আপনাদের তৈরি সাইকেল থেকে চেকশ্লোভাকিয়ার সাইকেল সস্তা। জনসাধারণ সস্তা জিনিস রেখে নামি জিনিস কিনবে কেন?'

দোকানি জানায়: 'আমাদের দেশের জনগণ বিদেশি মাল খুব কম কেনে। দেশি মাল থাকলে বিদেশি মাল কিনতে চায় না, যদি দাম একটু বেশিও দিতে হয়। সাংহাইয়ের অনেক দোকানদার ইংরেজি বলতে পারে।

জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে না, কারণ জনসাধারণ খুব সজাগ হয়ে উঠেছে। যদি কেউ একটু বেশি দাম নেয়, তবে তার আর উপায় নেই! ছেলে বাপকে ধরিয়ে দিয়েছে, স্ত্রী স্বামীকে ধরিয়ে দিয়েছে, এ রকম বহু ঘটনা নয়াচীন সরকার কায়েম হওয়ার পরে হয়েছে। তাই দোকানদারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সরকার যদি কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের ধরতে পারে, তবে কঠোর হস্তে দমন করে। এ রকম অনেক গল্প আমাদের দোভাষী বলেছে। রাতে হোটেলে ফিরে এলাম। আগামীকাল সকালে আমরা রওনা করব। (বইয়ের কিছু অংশ)

 

শব্দের অর্থ

অ্যাকজিবিশন=  প্রদর্শনী বা মেলা।

ইনস্ট্রুমেন্ট=  যন্ত্রপাতি।

ইমপেরিয়াল লাইব্রেরি= একটি লাইব্রেরির নাম।

উল্লেখযোগ্য= উল্লেখ করার মতো।

কঠোর হস্তে দমন = কঠিন শাস্তি দেওয়া ।

কালোবাজারি= অবৈধ কেনা-বেচা।

চেকশ্লোভাকিয়া= ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ।

দোভাষী= যিনি এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনান।

নিদর্শন বস্তু = যেসব বস্তু জাদুঘরে দেখানো হয়।

পাবলিক লাইব্রেরি= যে লাইব্রেরিতে গিয়ে সবাই বই পড়তে পারে।

বাদাম দিয়ে চলে= পাল তুলে চলে।

বিদেশি মাল= বিদেশি দ্রব্য। 

ভীতির সঞ্চার হওয়া= ভয় তৈরি হওয়া।

মিউজিয়াম= জাদুঘর।

নয়াচীন= নতুন চীন।

মুনাফাখোর= যে অতিরিক্ত লাভ করতে চায়। 

রিডিং রুম= পড়ার ঘর।

সাংহাই= চীনের একটি বন্দর নগরী।

স্লোগান= উঁচু স্বরে উচ্চারিত সমবেত কন্ঠের দাবি।

সজাগ= সতর্ক।

সরকার কায়েম হওয়া= সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া। 

 

পড়ে কী বুঝলাম

ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?

খ. বিবরণটি কোন সময়ের ও কোন দেশের?

গ. এই বিবরণে বাংলাদেশের সাথে কী কী মিল-অমিল আছে?

ঘ. লেখাটিতে চীনের মানুষের দেশপ্রেমের কোন নমুনা পাওয়া যায়?

ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

 

বলি ও লিখি

“আমার দেখা নয়াচীন' রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

কীভাবে লিখব বিবরণ

বিবরণ লেখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। দেখার ভঙ্গি ও লেখার ধরন একেক জনের একেক রকম। এমনকি, একই বিষয় নিয়ে দুজন লেখকের লেখাও এক রকম হয় না। তবে, বিবরণ লেখার সাধারণ কিছু নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।

১. প্রথমে লেখার বিষয় ঠিক করতে হয়।

২. বিষয়টির কোন কোন দিক নিয়ে লেখা যায়, তা ভাবতে হয়।

৩. লেখার সময়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে তার জবাব খুঁজতে হয়। এক্ষেত্রে কী, কেন, কীভাবে, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্ন কাজে লাগতে পারে।

৪. লেখায় ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।

৫. আবেগ-বর্জিত সহজ-সরল ভাষায় বিবরণ তৈরি করতে হয়।

৬. বিষয়ের সাথে মিল রেখে লেখাটির একটি শিরোনাম দিতে হয়।

 

বিবরণ লিখি

শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের বাইরে যাও। চারপাশ ভালো করে দেখো। লেখার জন্য এর মধ্য থেকে কোনো একটি বিষয় বাছাই করো। বিষয় হতে পারে গাছপালা, পশুপাখি, রাস্তা, নদী, মানুষ, প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য যে কোনো কিছু। এমনকি এ সময়ে দেখা কোনো ঘটনাও লেখার বিষয় হতে পারে। বাছাই করা বিষয়ের উপর ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

Content added || updated By
Promotion